রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক চাঙ্গা করতে মূলধন জোগাচ্ছে ভারত

ঋণপ্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ২ দশমিক ১১ ট্রিলিয়ন রুপি (৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার) সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত সরকার। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুই ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা মুডি’স ও ফিচ ভারতের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সংস্থা দুটির মতে, মূলধন বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে; এতে উপকৃত হবে আর্থিক ব্যবস্থাও। মূলধন বৃদ্ধির সরকারের এ প্রতিশ্রুতির খবরে গতকাল মুম্বাইয়ে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারদরে উল্লম্ফন দেখা যায়। খবর রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।    
গতকাল স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শেয়ারদর ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
বিগত আট বছরের মধ্যে এটি ছিল ব্যাংকটির আন্তঃদিনের লেনদেনে সর্বোচ্চ উল্লম্ফন। অন্যদিকে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়ে ৪০ শতাংশ। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১ মিনিটে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সমন্বিত সূচক নিফটি পিএসইউয়ে ২১ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যায়।
ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে শ্লথ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়াতে ঋণগ্রহীতারা ধারের অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের প্রয়োজনে ভারতের ব্যাংকগুলোয় আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়ানো অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠলেও তা লাগামহীন ঋণের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০০০ সালের পর সর্বোচ্চ। এ অবস্থার মধ্যে মূলধন ধরে রাখার কঠিন শর্তাবলি পূরণে ব্যাংকগুলোকে সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার অংশ হিসেবে এ অর্থ জোগাচ্ছে ভারত সরকার। ভারত সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থাগুলো।
ফিচ রেটিংস লিমিটেডের মুম্বাই শাখার অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জবিন জ্যাকব এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ইকুইটি গ্যাপ খুব বেশি থাকায় পূর্বে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই মূলধন সরবরাহ করা হচ্ছে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমাদের ঋণাত্মক আউটলুক দেয়ার অন্যতম কারণ এই দুর্বল তহবিলায়ন।’
মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিসের বিশ্লেষক শ্রীকান্ত বাদলমানি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় মূলধন জোগানোর এই উদ্যোগটিকে ইতিবাচক হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন। যে পরিমাণ অর্থ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ব্যাংকগুলোর সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা ও পুনঃমূলধনের জন্য যথেষ্ট বলে জানান তিনি।
এদিকে গত মঙ্গলবার ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তহবিলায়নের ২ দশমিক ১১ ট্রিলিয়ন রুপির মধ্যে ১ দশমিক ৩৫ ট্রিলিয়ন রুপি জোগাড় করা হবে পুনঃমূলধনায়ন বন্ড বিক্রি করে। বাদবাকি ৭৬ হাজার কোটি ডলার ‘অর্থসহায়তা’ ও বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান রজনিশ কুমার এক বিবৃতিতে বলেন, এ তহবিলের সুবাদে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর দক্ষতা আরো বাড়বে। সেই সঙ্গে মূলধনসংক্রান্ত শর্তাবলি পূরণও সহজ হবে। মুনাফা নিয়ে আশঙ্কা ও সম্পদের মান নিয়ে শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা এ সব ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। এর ফলে এ সব ব্যাংকে বেশির ভাগ ইকুইটি মূলধন ভারত সরকারই সরবরাহ করছে। ভারতের ব্যাংকগুলোয় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের রেশিও বর্তমানে বিগত ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর মূলধন সক্ষমতা কমছে এবং তারা ঋণপ্রদান সক্ষমতা হারাচ্ছে।
এছাড়া ঋণ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান সবচেয়ে শোচনীয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত সমন্বিত তথ্যে এমনটাই দেখা গেছে। ক্রেডিট সুইস গ্রুপ এজির দেয়া তথ্যানুযায়ী দেশটিতে অনাদায়ী ঋণের ৯০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। বেসরকারি মালিকানায় থাকা ব্যাংকগুলোও খুব একটা নিরাপদ অবস্থানে নেই। গত মঙ্গলবার ভারতের ব্যাংকগুলোর তহবিলায়নে দুর্বল অবস্থা বিবেচনায় এ খাতের ঋণমানের আউটলুক ঋণাত্মক করে ফিচ। অন্যদিকে বেশির ভাগ ব্যাংক উল্লেখযোগ্যহারে মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হবে বলে সতর্ক করেছে মুডি’স।

About the Author

Leave a Reply

%d bloggers like this: